সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা সদরের বাইপাস সড়কে গত ১৫সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। একই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন ঘটা করে আওয়ামীলীগে যোগদান করা বিএনপি নেতা মো. ওহিদুজ্জামান ।
ওলামা দলের মঞ্চে মো. ওহিদুজ্জামান বক্তব্য রাখায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে ওহিদুজ্জামান বিএনপিতে ফিরে আসায় তৃণমূল বিএনপিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং খুশির আমেজ বিরাজ করছে। মো. ওহিদুজ্জামান উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ভাওয়াল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ইউসুফদিয়া গ্রামের সম্ভান্ত্র শিক্ষক পরিবারের মৃত আলহাজ্ব আ: হাই মাষ্টারের পুত্র।
জানা যায়, মো. ওহিদুজ্জামান ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের পক্ষে ধানেরশীষ প্রতিকের সমর্থনে নির্বাচনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ২০০৪ সালে তিনি ভাওয়াল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে ওহিদুজ্জামানের নিজ গ্রামে লিটন আলম হত্যা মামলায় তাকে জড়িয়ে দেয়। শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করায় তাকে এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে আদলতে সেচ্ছায় হাজির হয়ে ১১ মাস কারাবরণ করে জামিনে মুক্ত পান। এছাড়াও বিএনপির রাজনীতি করায় তিনি ২০/২৫ মামলায় অসংখ্যবার জেল হাজতে যান।
সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করায় বিএনপির সমর্থনে ২০১১ সালে ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০১৪ সালে সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দিনদিন জনসমর্থন বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিযোগ করে ২০১৭ সালে বিভিন্ন মামলা দেখিয়ে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর মহামান্য হাইকোর্ট তাকে স্বপদে পুনর্বহাল করেন। ২০২১ সালথা উপজেলা পরিষদ ও থানা ভাংচুরের মূল পরিকল্পনাকারী বানিয়ে ৫টি মামলায় তাকে আসামি করা হয়। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হয়েও ঐ ৫ মামলায় অসংখ্যবার তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং তিনি প্রায় ৯ মাস কারাবরণ করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে সতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি ধানেরশীষের এজেন্ট ছিলেন।
সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ওহিদুজ্জামান বলেন, ১৯৯৬ থেকে একটানা ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম, আমি ঘটনাস্থলে না থাকলেও খুনের মামলায় মিথ্যা আসামি করা হয়। কিছু নিরীহ মানুষ সহ আমাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে জানতে পেরেই আমি আওয়ামীলীগে যোগদান করি। সাজেদা চৌধুরীর দুই ছেলেকে সালথা নগরকান্দার মানুষ হাড়ে হাড়ে চেনে। তাদের কাছে কেউই নিরাপদ ছিলো না। আমি যোগদান করার পর বিএনপির অনেক নেতা কর্মীকে সুবিধা দিয়েছি। এমনকি অনেক আওয়ামী কর্মীকেও সুবিধা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দলের প্রয়োজনে আমি ফিরে এসেছি। বিগত দিনে আমার বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম দেখাতে পারবেন না। আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম আমার অনেক ভক্ত অনুসারী আছে। ফিরে আসায় তারা খুশি হয়েছে। তবে যারা বিএনপিকে ভাগ করে রাখতে চায়, শামা ওবায়েদের ভালো চায় না শুধু তারাই আমার ফিরে আসায় খুশি হয় নাই। এদের মধ্যে বড় একটা অংশ আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক রয়েছে, এরা ফেসবুকে বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। এখন পেছনে তাকানোর সময় নাই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি কালাম বিশ্বাস বলেন, আমাদের নেত্রী শামা ওবায়েদ যাকে দলে রাখবেন আমরা তার সাথেই কাজ করবো। ওহিদ চেয়ারম্যান সালথা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জন্য একটা ফ্যাক্ট। তিনি আমাদের সাথে কাজ করলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার খায়রুল বাসার আজাদ জানান, প্রকৃতপক্ষে ওহিদ চেয়ারম্যান একজন ভাল ও বড় মনের মানুষ। তিনি বিএনপিতে ফিরে আসায় তৃণমূল থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত একটা খুশির আমেজ বিরাজ করছে। দলে একটা চাঙ্গা চাঙ্গা ভাব দেখা যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ফোন দিয়ে নেতা কর্মীরা তাদের মতামত স্পষ্ট করেছে। তারা সবাই খুবই খশি। উপজেলা পর্যায়ে এমন স্পষ্টবাদী নেতা পেয়ে আমরা আনন্দিত।
সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার বলেন, ওহিদুজ্জামান কে একটা মিথ্যা হত্যা মামলা জড়ানো হয়। সেই হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে তিনি আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তিনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতেন, নেতা কর্মীদের খেয়াল রাখতেন। তিনি রাজনীতি বোঝেন, আটটি ইউনিয়নে তার সমর্থক রয়েছে, তাই এখন আর বিভিজন নয়। তিনি এখন নিবেদিত প্রাণ হয়ে দলের জন্য কাজ করছেন। যারা বিএনপির ভালো চায়, শামা ওবায়েদের ভালো চায় তারা এই বিষয়ে খুশি হবে। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply